গাইডলাইন

চমৎকার প্রেজেন্টেশন তৈরির নীলনকশা

প্রেজেন্টেশনের হাতেখড়ি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হলেও কর্মজীবনের প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই প্রেজেন্টেশনের ব্যাপক ‌ভূমিকা রয়েছে। একটি চমৎকার প্রেজেনটেশন উপস্থাপন করতে হলে অনেক গুলো বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়। তার মধ্যে লক্ষণীয় ৩টি ধাপ হচ্ছে – প্ল্যানিং করা, তারপর সেই অনুযায়ী প্রেজেন্টেশন স্লাইড তৈরী করা এবং সবশেষে সবার সামনে উপস্থাপন করা।

অনেক সময় দেখা যায় প্রজেন্টেশনের শুরুতে কিংবা শেষে; কিছু না কিছু বিষয় ভূল হয়ে যায়। যেসকল বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখলে সুন্দরভাবে একটি প্রেজেন্টেশন সবার সামনে উপস্থাপন করা যায় সেগুলোই একটু ভিন্নভাবে (তালিকা আকারে) তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

১। প্রেজেন্টেশন তৈরি করার আগে প্ল্যান করা ও সেভাবে প্রয়োগ করা গুরুত্বপূর্ণ

প্রেজেন্টেশনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা।

টপিক বা বিষয়বস্তু নিয়ে গবেষনা (রিসার্চ) করা।

একটি আউটলাইন তৈরি করা।

ভূমিকা বা ইন্ট্রো (প্রেজেন্টেশনের টপিক অনুযায়ী) তৈরী করা।

শেষ কিছু কথা (যেমন উপসংহার) লেখা।

এবার পুরো প্রেজেন্টেশন তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু করা।

২। পছন্দের সফটওয়্যার বা টুলস্ সিলেকশন

ভালো প্রেজেন্টেশন করার জন্য টুলস সিলেকশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিচের প্রশ্ন গুলো আপনাকে সঠিক টুলস খুজে নিতে সাহায্য করবে

কোন সফটওয়্যারটি ব্যবহার করবো?

যেখানে প্রেজেনটেশন দিবো সেখানে কি সফটওয়্যার নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা রয়েছে?

যেই সফটওয়্যার ব্যবহার করবো সেটাতে কি পর্যাপ্ত ফিচার (যেরকম দরকার) রয়েছে?

কোন হার্ডওয়্যার দিয়ে প্রেজেন্টেশন তৈরী করবো (Windows পিসি, নাকি Linux ল্যাপটপ নাকি Mac দিয়ে!)

এই প্রেজেন্টেশন কি গ্রুপ ভিত্তিক হবে?

৩। প্রেজেন্টেশনের ডিজাইন যেনো প্রফেশনাল (দেখার মতো) হয় –

অসাধারণ একটি প্রেজেন্টেশন ডিজাইন চারপাশের পরিবেশকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। তাই ডিজাইন শুরু করার আগে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে প্ল্যান করে ফেলি –
নোটঃ নিচের নির্দেশনাটি শুধু তাদের জন্যই যারা নিজে ডিজাইন করবে। যদি টেম্প্লেট ডাউনলোড করে অথবা অন্য কাউকে দিয়ে ডিজাইন করিয়ে নেয় তাহলে এটা প্রযোজ্য হবে না।

ডিজাইন চেকলিস্ট – যেভাবে যা করবো

বেসিক লেআউট দিয়ে ডিজাইন শুরু করা।

ফন্ট ও এর সাইজ ঠিক করা।

মানানসই কালার পছন্দ করা।

ছবি, ভিডিও, এনিমেশন প্রয়োজন মতো যোগ করা।

প্রেজেন্টেশনকে প্রাণবন্ত করে তুলতে স্পেশাল ইফেক্ট দেওয়া যেতে পারে।

৪। সুন্দরভাবে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা

ভাল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করার জন্য ভেন্যু পরিবেশনের উপযোগী কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সবকিছু ঠিক ঠাক কিনা তা যাচাই করতে নিচের তালিকাটি লক্ষ্য রাখা যেতে পারে –

ভেন্যুতে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে

বসার জন্য পর্যাপ্ত সিট বা বসার জায়গা রয়েছে কিনা!

অনেক সময় বিভিন্ন ধরণের ক্যাবলের প্রয়োজন হয়, সেগুলো রয়েছে কিনা তা দেখে নেওয়া।

কম্পিউটার, মাউস ও কি-বোর্ড রয়েছে কিনা এবং সেগুলো চেক করে দেখে নিতে হবে।

ভেন্যুতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

মাইক্রোফোন এবং স্পিকারের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।

রিমোট থাকলে স্লাইডিং করতে সুবিধা হয়।

উন্নত মানের ডিস্প্লে স্ক্রিন থাকা (যদি প্রয়োজন পড়ে)

অনেক সময় ভিডিও অ্যাডাপ্টারের প্রয়োজন হয়, তাই এর ব্যবস্থা রাখা।

আর সবশেষে প্রজেক্টর এর ব্যবস্থা রাখা।

ব্যস, প্রেজেনটেশন দেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়ে গেলো।

প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করার আগে নিজের সাথে কিছু মুহুর্ত –

যে বিষয়ের উপর প্রেজেন্টেশন দিবো সে বিষয়টা নিয়ে আমি কি কি জানি?

স্লাইডে দেওয়া প্রতিটা শব্দ দেখে দেখে না বলা।

নিজের উপরে পূর্ণ আস্থা রাখা।

অপ্রয়োজনীয় শব্দগুলো বলা থেকে বিরত থাকা।

এমনভাবে কথা বলবো যাতে সবাই ঠিকভাবে শুনতে পায়।

কথা খুব দ্রুত না বলা।

খেয়াল রাখা যাতে কথা বলতে বলতে আটকে না পড়তে হয়।

শারীরিক অঙ্গ-ভঙ্গি ঠিক রাখা।

সবার দিকে দৃষ্টি রাখার চেষ্টা করা।

প্রেজেনটেশন যাতে কারো একঘেয়েমি না লাগে সেই বিষয়ে খেয়াল রাখা।

উপস্থাপনা যাতে দীর্ঘসময় ধরে না হয় আবার যাতে অল্প সময়েও না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।

৫। ‘এবং’ ভিন্নধর্মী কিছু করে দেখানো –

প্রেজেনটেশনের সময় মজাদার কিছু করে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা যেতে পারে। যেমন, কোনো বিষয়ে ভোট নেওয়া বা শরীর চর্চা করানো ইত্যাদি।

তাছাড়া মজাদার বা হাস্যরসাত্মক ছবি, ভিডিও দেখিয়েও অন্যরকম মুহুর্ত তৈরি করা যায়।

তবে সব জায়গায় বা সব পরিবেশে ফানি কিছু করা বিপদজ্জনক ও হতে পারে। তাই এই বিষয়টি চাইলে অনেকে এড়িয়ে যেতে পারেন।


আশাকরি পুরো বিষয়টি আপনার কাছে সহজ মনে হয়েছে। যদি এই গাইডলাইনে কোনো বিষয় অনুপস্থিত থাকে তাহলে মন্তব্য করে জানাতে ভূলবেন না।

এই লেখাটি সম্পাদনা করা হয়েছে আগস্ট ১১, ২০১৮ ১২:১৩ অপরাহ্ন

মন্তব্য পড়ুন

শেয়ার করুন

সর্বশেষ প্রকাশনা

প্রোগ্রামিং- সহজ নাকি কঠিন?

প্রোগ্রামিং শুরু করার আগে একটি প্রচলিত লাইন যা প্রায় সকল বিগিনারদের শুনতে হয়- "প্রোগ্রামিং খুব…

এপ্রিল ২৫, ২০২১

ডেনো এবং নোড জেএসের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনটির জনপ্রিয়তা বেশি?

ডেনো কি? ডেনো হচ্ছে জাভাস্ক্রিপ্ট ও টাইপস্ক্রিপ্টের একটি সিকিউর রানটাইম, এটি জাভাস্ক্রীপ্টের V8 ইঞ্জিন এবং…

জানুয়ারি ২৪, ২০২১

নেটওয়ার্কিং বেসিকস

অনেকেরই ধারণা ইন্টারনেট মানে একটি ম্যাজিকেল ক্লাউড যা আমাদের পছন্দের ওয়েবসাইট, অনলাইন শপ এবং অন্তহীন…

অক্টোবর ৪, ২০২০

পিএইচপি কি? কেন কিছু মানুষের কাছে এটি পছন্দনীয় নয়?

ওয়েবের ৭৮.৯% ওয়েবসাইটই পিএইচপি তে রান হওয়া স্বত্বেও এটি ভবিষ্যতের ইকোসিস্টেমের সাথে যাচ্ছেনা। বিশেষ করে…

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০

MySQL বনাম MongoDB ও এদের মধ্যে পার্থক্য

আমরা প্রত্যেকেই কম বেশি বিভিন্ন প্রয়োজনে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট এবং ওয়েব অ্যাপ ব্যবহার করে থাকি। এসকল…

জুলাই ১৮, ২০২০

ম্যালওয়্যার সম্পর্কে যা জানা জরুরী

ম্যালওয়্যার! বর্তমান সময়ে আসলেই একটি ভয়ের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। বড় টেক কোম্পানী থেকে ছোট পার্সোনাল…

জুন ২৭, ২০২০