লিংকডইন: প্রফেশনালদের সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম
একবিংশ শতাব্দীর এই যুগে এসে লিংকডইন (LinkedIn) সম্পর্কে জানে না এমন ব্যক্তি খুব কমই আছে। সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ফেসবুক যেমন সর্ব সাধারণের কাছে জনপ্রিয়; লিংকডইন ঠিক ততটাই প্রফেশনাল ব্যক্তিদের কাছে জনপ্রিয়। আপনি জেনে অবাক হবেন, বর্তমান সময়ে ব্যাপক ব্যবহৃত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ( যেমন: ইউটিউব, ফেসবুক এবং টুইটার) ইত্যাদির আগে লিংকডইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
লিংকডইন হচ্ছে এমন একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট যেটা কিনা শুধুমাত্র প্রফেশনাল ব্যক্তিদের জন্যই ডিজাইন করা সবচেয়ে বড় কমিউনিটি। যেখানে ব্যবসায়িক ও কর্মসংস্থান ভিত্তিক সার্ভিস আদান-প্রদান করা হয়। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অতি সহজেই আপনি বিশ্বের অন্য যেকোনো প্রফেশনাল ব্যক্তিদের সাথে আপনার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারবেন।
প্রফেশনাল আইডেন্টিটিকে আরো সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে লিংকডইন আপনাকে সর্বোচ্চ সহায়তা করতে পারে। মূলত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান লিংকডইন ব্যবহার করে নিজেদের প্রডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচার ও প্রসার করে থাকেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্যালেন্ডেড কর্মী খুজে থাকে। অপরদিকে যারা স্টুডেন্ট তারা লিংকডইনের মাধ্যমে ইন্টার্ন বা জব খুঁজে থাকেন। স্টুডেন্ট ছাড়াও অনেকে প্রতিনিয়ত নতুন ও ভালো জবের আশায় নিয়মিত লিংকডইন ব্যবহার করে থাকেন।
লিংকডইনের পেছনের ইতিহাস
যেই সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে তোলপাড় এখন সারা দুনিয়ায়, চলুন জেনে নেয়া যাক আজকের এই লিংকডইনের অতীতের কিছু কথা –
লিংকডইন হচ্ছে একটি আমেরিকান ব্যবসায়িক এবং কর্মসংস্থান ভিত্তিক সার্ভিস যেটা কিনা মাইক্রোসফট এর অধীনস্ত সামাজিক যোগাযোগের একটি মাধ্যম। এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে রেইড হফম্যান যিনি কিনা ২০০২ সালের ২৮ ডিসেম্বর লিংকডইন প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৩ সালের ৫ই মে এটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উন্মুক্ত হয়।
বর্তমানে লিংকডইন এর সিইও হচ্ছেন জেফ উইনার এবং এর সদরদপ্তর হচ্ছে মাউন্টেইন ভিউ, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র। এই প্ল্যাটফর্মটি বর্তমানে চব্বিশটি ভাষায় ব্যবহার করা যায়। ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, লিঙ্কডইনে বর্তমানে ছয়শ দশ মিলিয়নেরও বেশি সদস্য রয়েছে এবং নেটওয়ার্কটিতে তিনশ তিন মিলিয়ন সক্রিয় মাসিক ব্যবহারকারী রয়েছে, যার শতকরা চল্লিশ ভাগ প্রতিদিন সাইটটি ভিজিট করে।
তো এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে, লিংকডইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। এই মুহূর্তে আপনার যদি একটি লিংকডইন প্রোফাইল না থেকে থাকে, তবে আর দেরি না করে এখনি একটি অ্যাকাউন্ট খুলে সাজিয়ে নিন আপনার প্রোফাইলটিকে।
লিংকডইন টেকনোলজি স্ট্যাক:
যেই লিংকডইন নিয়ে এত কথা !!! আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি এই প্ল্যাটফর্মটি কিভাবে তৈরি হয়েছে ? তো চলুন জেনে নেয়া যাক-
মূলত যেকোনো সাইট তৈরি করতে অনেক ল্যাঙ্গুয়েজের সমন্বয় লাগে। ঠিক তেমন ভাবেই লিংকডইন এর ফ্রন্ট-এন্ড এর জন্য ব্যবহার হয়েছে জাভাস্ক্রিপ্ট, ব্যাক-এন্ড ডেভেলপ করা হয়েছে জাভা, স্কালা এবং জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে। আর এখানে তথ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ডাটাবেজ হচ্ছে ভলডেমর্ট (Voldemort) যা লিংকডইনের ডেভেলপ করা।
অনেকের কাছে ভলডেমর্ট এই নামটি শোনা মাত্রই কোনো এক ভিলেন ক্যারেক্টার এর কথা মনে পড়তে পারে।জী, হ্যাঁ ! মনে পরারই কথা। কেননা এর নামকরণ করা হয়েছে কাল্পনিক হ্যারি পটার উপন্যাসের ভিলেন লর্ড ভলডেমর্টের নামে।
লিংকডইন প্রোফাইল উপস্থাপনের কিছু টিপস:
এ পর্যায়ে আমরা লিংকডইন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য জানবো যে কিভাবে লিংকডইন ব্যবহার করে নিজের নেটওয়ার্ককে আরও সমৃদ্ধ করা যায়, কিভাবে নিজের প্রোফাইলকে আরও চমকপ্রদ করা যায় এবং কিভাবে ভদ্রতা বজায় রেখে কমিউনিকেশন করতে হয়।
- প্রথম টিপসঃ লিংকডইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি হচ্ছে আপনার প্রোফাইল। যে প্রোফাইলের মাধ্যমে আপনি অন্যদের সাথে কমিউনিকেশন করবেন সেই প্রোফাইলটি দেখতে যদি অনেকটা ফেইক লাগে তখন অনেকেই আপনার কানেকশন রিকুয়েস্টটি একসেপ্ট করবে না। এজন্যই আপনার প্রোফাইলটিকে হতে হবে তথ্যবহুল, প্রোফাইল পিকচার হতে হবে মার্জিত এবং ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ হতে হবে আপনার বা আপনার প্রফেশন এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
- দ্বিতীয় টিপসঃ কাউকে কানেকশন রিকুয়েস্টট পাঠানোর আগে পার্সোনালাইজ মেসেজ করতে পারেন। এতে করে যাকে রিকুয়েস্টটি পাঠাচ্ছেন তার উপর আপনার সম্পর্কে একটা ইতিবাচক প্রভাব পরে এবং রিকুয়েস্টটি একসেপ্ট হবার সুযোগ বহুগুণেই বেড়ে যায়। আর রিকুয়েস্টটি একসেপ্ট হবার পর কখনোই ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
- তৃতীয় টিপসঃ প্রোফাইলে যেখানে নিজের সম্পর্কে কিছু লিখতে হয় মানে সামারি সেকশনটা কখনই খালি রাখবেন না। এমনকি এটা লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রফেশনালিজম এর পরিচয় দিবেন। তাছাড়া আপনার এডুকেশন, এক্সপেরিয়েন্স ও স্কিল দিতে কিন্তু কখনই ভুলবেন না।
- চতুর্থ টিপসঃ লিংকডইন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একটা কথা সব সময়ই মনে রাখতে হবে যে, এটা অন্য সব সোশ্যাল মিডিয়া থেকে অনেকটাই আলাদা। তাই চ্যাট করার সময় থাকতে হবে সতর্ক। ভুলেও এর ইনবক্সকে হোয়াটস্ অ্যাপ বা মেসেঞ্জারের ইনবক্স এর মতো ভাবলে চলবে না কিন্তু! অযথা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা বা হুট হাট করেই চাকরির জন্য কখনোই কাউকে ইনবক্স করা যাবে না।
- পঞ্চম টিপসঃ আমরা অনেকেই অভ্যাস বশত অন্যের কমেন্ট বক্সে নানা ধরনের অপ্রাসঙ্গিক এবং নেতিবাচক কমেন্ট করে থাকি যার ফলে এক পর্যায়ে বিতর্ক ও সমালোচনায় জড়িয়ে পরি। যেটা কিনা কখনোই লিংকডইনে করা উচিৎ না। তাই সব সময়ই নিজের মন্তব্যকে ইতিবাচক এবং অযথা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আশা করছি এসব টিপসগুলো মেনে চললে আপনি লিংকডইনে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবেন এবং আপনার প্রোফাইলটি হবে চমকপ্রদ। তো আর দেরি না করে এখনি আপনার লিংকডইন প্রোফাইলটিকে সাজিয়ে ফেলুন এবং নেটওয়ার্ককে আরও সমৃদ্ধ করুন।
লেখার শেষ অংশে হঠাৎ করেই আমার এক বান্ধবীর কথা মনে পরে গেল। যার সাথে কিনা আমার নামের আংশিক মিল তো রয়েছেই সাথে অনেক মতের মিলও রয়েছে। তো মতের মিল টা না হয় বুজলাম কিন্তু নামের আবার মিল কিভাবে ?
এই যে আমার না ফারিয়া আফরিন আর আমার বান্ধবীর নাম সাদিয়া আফরিন। তো যাই হোক , একদিন আমরা ক্যাম্পাস এ বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তো আমাদের কথোপকথনের এক পর্যায়ে সাদিয়া তার রিসার্চ রিলেটেড টপিক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে আমার সাথে এক আইডিয়া শেয়ার করে। হঠাৎ করেই আমার সেই কথাটি মনে পরে যায়।
তো আমিও আরেকটু কৌতূহলবশত হয়ে ভাবলাম যে, লিংকডইন শব্দের সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ কি হতে পারে…!!! তো যেই ভাবনা সেই কাজ। অবশেষে বের করেই ফেললাম , লিংকডইন শব্দের সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ।